—আমি এই বইটার কথাই বলছিলাম সেদিন।
—এই বইটা? ঠাকুমা দিদিমারা? এইটা পড়া হয়নি। দেখেছি অবশ্য।
—পড়তে বলব।
—কেন? অবশ্য এই স্মৃতিচারণ ধরনের লেখালিখির মধ্যে একটা সুখপাঠ্যতা থাকে ঠিকই। কিন্তু পারটিকুলারলি এই বিষয়টা নিয়ে কিন্তু খুবই সিরিয়স বেশ কিছু কাজ হয়েছে।
—সিরিয়স কাজ মানে অ্যাকাডেমিয়া আসপেক্টে?
—টু সাম এক্সটেন্ট। জেন্ডার স্টাডিজ-এর জায়গা থেকে…, কোথাও একটা ফেমিনিস্ট অ্যাংগল থেকে। এটা কি সেই জন্রের কাজ?
—না, একেবারেই না। এবং ‘একেবারেই না’-টাই এই বইটার জোরের জায়গা।
—ইন্টারেস্টিং তো! কেন?
—যে কারণে আনইন্টারপ্রিটেড ইনফরমেশনকেই ইতিহাসচর্চার প্রাইমারি সোর্স বলে মান্য করা হয়।
যে বইটি নিয়ে কথা বলছি তা স্মৃতিকথা জন্রের। কোনও আত্মজন যখন তাঁর পূর্বজের স্মৃতিচারণ করেন, তখন খুব একটা কিছু প্রমাণ করবার দায় তাঁর থাকে না। বড়োজোর সামান্য কিছু অতিকথন থাকলেও থাকতে পারে—“আমার দিদিমা ছিলেন ওই তল্লাটের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী” বা “আমার ঠাকুমার মতো ইচামুড়া কাউকে বানাতে দেখিনি” জাতীয় কিছু নির্বিষ অতিশয়োক্তি। জেন্ডার স্টাডিজ-এর দৃষ্টিকোণ থেকে বইটি নির্মিত হলে সংকলিত একাধিক লেখারই এতে স্থান পাওয়ার কথা নয়। অনেকগুলি লেখাতেই বিধবা ঠাকুমা দিদিমারা যে বৈষম্যের শিকার ছিলেন, তা আপাতভাবে উহ্যই থেকে গেছে—একটি-দুটি লেখা পড়লে মনে হতেও পারে যেন নাতি-নাতনিদের জন্য নারকেল তক্তি আর চালতার আচার বানানো কিংবা তাদের গুনগুন করে গল্প শোনানোর থেকে আনন্দময় কিছু আর সে জীবনে থাকতে পারে না! যদিও ব্যাপারটা কিন্তু আদতে এরকম নয়। এই ধরনের পারসোন্যাল অ্যাকাউন্ট-গুলি হচ্ছে আসলে আকাঁড়া তথ্যের আকর, এসব ক্ষেত্রে পাঠক যেটা যা সেটাকে সেভাবেই পাচ্ছেন, এবং তা জোগান দেওয়ার সময়ে লেখকের কোনও সামাজিক-রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থাকছে না (বা থাকলেও পাঠক তার আভাস পাচ্ছেন না)। অর্থাৎ লেখক এই ব্যক্তিগত আলাপকে তত্ত্বের খাপে বসাচ্ছেন না, তাঁর পূর্বজ সম্পর্কে যা তাঁর মনে রয়েছে এবং যা তিনি মনে রাখার মতো মনে করছেন, সেটাকেই পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন। এবার তথ্যের মলাটের মাঝে সত্যিটা যে অধরা থেকে যাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। যাঁরা তা ধরতে-বুঝতে চাইছেন, তাঁরা ধরতে, বুঝতে পারছেন।
উদাহরণ দিয়ে বলি। ধরে নিন, একজন লিখছেন (এই বইয়ে কেউ লেখেননি, উদাহরণ মাত্র)—“আমার পিতামহী শুদ্ধাচারিণী ও প্রবল ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী ছিলেন, তাঁর খর জিভের ভয়ে এলাকার মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন আমাদের ভদ্রাসনের কাছ ঘেঁষতে সাহস পেত না।” এখন যদিও লেখক মুসলমানের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলার ইচ্ছাকে ‘শুদ্ধাচার’ এবং চলার ক্ষমতাকে ‘প্রবল ব্যক্তিত্ব’ বলেই লিখছেন, কিন্তু দেখতে গেলে তিনি কোনও অসততা করছেন না। যেটা হয়েছিল/হয়ে এসেছে সেটাকেই তিনি লিপিবদ্ধ করছেন। আকাডেমিয়া অ্যাপ্রোচ থেকে যদি সংকলনটি নির্মিত হতো, তাহলে লেখক (বা সম্পাদক) উল্লিখিত বাক্যটির আগে (বা ভূমিকায়) হয়তো লিখতেন “তখনকার সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি সম্পন্ন হিন্দু নারীদের কী দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তা বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণ দেব। উদাহরণটি এই জন্যই বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য, কারণ ওই পুরুষনিয়ন্ত্রিত সমাজে নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই বেশি মুসলমান-বিদ্বেষী হয়ে উঠতেন...” ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এখানে লেখকরা তা করেননি।
পূর্বজার অবস্থান/দৃষ্টিভঙ্গি আজকের পাঠকের কাছে সমর্থনযোগ্য না মনে হলেও, লেখক যেটা সত্যি সেটাকেই লিখছেন। সমর্থনযোগ্য একটা বয়ান লিখতে হবে—এই পূর্বধারণা থেকে লিখলে লেখককে অনৃতভাষণ করতে হতো কিংবা লেখা কাটছাঁট করতে হতো। কিন্তু এখানে আমরা অসম্পাদিত সত্যিটাকেই পাচ্ছি। একটা সমাজ ও সময় যেখানে ‘শুদ্ধাচার’ ও ‘ব্যক্তিত্ব’-এর ধারণাগুলি এরকমই ছিল—ঠাকুরমার সঙ্গে সেই সমাজ ও সময়টাকেও আমরা ধরতে পারছি। স্বপ্না দত্তকে ধন্যবাদ, বেশ একটা গ্রামভারি বইয়ের সম্পাদক হয়ে ওঠার চাপ তাঁকে লুব্ধ করেনি, তাঁর শুরুর কথা-র মতোই সহজতা নিয়ে ভানহীন, ঋজু ও সুগম গ্রন্থটি তিনি সংকলিত করেছেন। বইটি এক নিবিড় মায়া তৈরি করে, যার শিকড় খুব বেশিভাবে বাস্তবের জমিতে।
এই বইয়ে আকাঁড়া লেখার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হল হিমানীশ গোস্বামীর সরোজিনী। একটুখানি পড়লেই বুঝবেন, কেন। “রতনদিয়া গ্রামে শাশুড়িদের নিয়ে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলত, তবে প্রকাশ্যে অবশ্যই নয়—শ্রেষ্ঠ শাশুড়ি কে? —আবার কে? সরোজিনী দেবী, আমার ঠাকুমা। কোন শাশুড়ি বউদের প্রতি কতটা বদাচরণ করতে পারেন, কতখানি মানিয়ে নিতে পারেন, কতখানি তাদের বাপের বাড়ির প্রতি খোঁটা দিতে পারেন, কণ্ঠে কতটা ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গি আনতে পারেন, শাশুড়িদের পাকা চুল তুলে দেওয়া, ঘামাচি গেলে দেওয়া, গায়ে বা পায়ে ব্যথা হলে পা বা গা টিপিয়ে নেওয়া ইত্যাদি অ্যাডিশনাল বিষয়ও থাকত। আবার এমনও দেখা যেত, কোনও দুর্বলমনস্কা শাশুড়িকে কাউনসেলিং-এর মাধ্যমে তাঁদের সচেতনতা সৃষ্টি করার ব্যাপারে সর্বসেরা ছিলেন আমার ঠাকুমা। দরকার বুঝে তিনি দুর্বল শাশুড়িদের হয়ে নিজেই স্বেচ্ছাসেবিকা হয়ে অন্যের বাড়ির বউদের বাক্যবোমায় জর্জরিত করতেন। রতনদিয়া গ্রামের বেশ কিছু দুর্বল শাশুড়ি এজন্য আমার ঠাকুমার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে নাড়ু, পিঠে, মটর ডালের বড়ি ইত্যাদি ভেট পাঠাতেন। ঠাকুমার শাশুড়ি হিসেবে এমনই খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল যে অনেক বাবা-মা এই গ্রামের ছেলেদের জামাই করতে ইতঃস্তত করতেন, ফলে গ্রামের ছেলেদের ভালো পরিবারে বিয়ে করায় বেশ বেগ পেতে হত।”
প্রতিটি লেখা ধরে ধরে কথা বলবার পরিসর এটা নয়। তবুও কেউ কেউ আলাদা করে মনে দাগ কেটে যান। যেমন অর্ধেন্দু চক্রবর্তীর ষোড়শীবালা পেঁয়াজ রসুনের মতো টোম্যাটোকেও ম্লেচ্ছজ্ঞানে পরিহার করেন, অথচ বেশ অপ্রত্যাশিতভাবেই হুঁকো খাওয়ার প্রিয় সঙ্গী করেন একজন ‘কুচকুচে কালো, সাদা দাড়ি’ মুসলমান পুরুষকে—ঠাকুরমার প্রাণের বন্ধু তিনি, যত প্রাণের কথা তাঁরই সঙ্গে প্রতিদিন! যদিও এই প্রাণের বন্ধুর আঙিনা পেরিয়ে দাওয়ায় আসার অনুমতি ছিল না। অথবা সুজিত সুরের দিদিমা জ্যোতির্ময়ী। “দাদু মারা যাবার পর আমার মাকে নিয়ে আঁতুড়ঘর থেকে বেরিয়ে দিদিমা যে অকূলে পড়েছিলেন, তা থেকে আবার উদ্ধার পাওয়া ছিল এক অসম্ভব ব্যাপার। চারটি সন্তান নিয়ে বাপের বাড়িতে সৎমা-র সংসারে জায়গা পাবার উপায় ছিল না। ভাসুররা কেউই একটু ফিরে তাকালেন না। সেই সময়ে এক প্রৌঢ় মুসলমান কী জানি কখন এই হতভাগিনীকে দেখে তার ‘মেয়ে’ বলে ডেকেছিল, শুনেছিল তার দুঃখের কথা। বাপের কর্তব্য করেছিল সেই মানুষটি, এক বস্তা চাল পাঠিয়ে দিয়েছিল দিদিমার ঘরে। হয়তো দিদিমা সেই প্রৌঢ়ের নামও আমাকে বলেছিলেন, সে কথা আমার মনে নেই। দিদিমা চলে গেছেন, আর দশ বছর হয়ে গেল, মা-ও চলে গেছেন। কোথা থেকে আর সে নাম খুঁজে পাব। শুধু বলতে পারি, সেই চালের ভাত খেয়ে দিদিমা সেদিন বেঁচে গেলেন। তার ফলে বেঁচে গেলেন আমার মা।” মনে থেকে যায় মীরা রায়ের কিরণবালা-র কথা—হাতে বই নিলে যাঁকে ভর্ৎসনা করা হতো “রাড়ি মাইনষ্যের আবার বই পড়া কী?”—দৃঢ়চেতা সেই তিনি যেভাবে এপারে এসে ‘উদ্বাস্তু কলোনির মুরুব্বি’ হয়ে উঠলেন। তমোনাশ ভট্টাচার্যর আশালতা দেখেন তাঁর শাশুড়ি ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিতে আত্মগোপনকারী স্বামীর লিফলেট-প্যামফ্লেটের বোঝা পেটকোঁচড়ে ঢেকে শুয়ে আছেন পোয়াতি সেজে। মিতালী সেনের দিদিমা রাজলক্ষ্মী আগ্নেয় সত্তরে প্রেসিডেন্সি জেলে নকশাল মেয়েকে দেখে এসে লিলুয়া হোমের দিকে রওনা দেন, সেখানে তাঁর ১৬ আর ১৪ বছরের আরও দুই ছেলেমেয়ে আটক আছে, তাদের দাদা-দিদিরা সমাজবদলের স্বপ্ন দেখেছিল বলে। ‘আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে’ তাঁর স্বামীকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেলে এ থানা ও থানা ঘুরে ঘুরে খুঁজে বের করেন পুলিশি নিপীড়নের শিকার মৃতপ্রায় শরীরটিকে। কৃষ্ণা ভট্টাচার্যর দিদা শুভঙ্করী ত্রয়োদশী তিথিতে চিরপালনীয় মৌনব্রত ভাঙেন নকশাল খুঁজতে আসা সিআরপি-র সামনে মুখরা হয়ে রুখে দাঁড়াবেন বলে! তা নিয়ে ধর্ম-অধর্মের কথা তুললে নির্দ্বিধায় যিনি বলতে পারেন—“থো ফালাইয়্যা তোর ব্রত। মানুষ যেইখানে বিপন্ন, সেইখানে ব্রত দিয়া কি আমি ধুইয়্যা খামু?”
অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা আয়েশা খাতুনের নানীরা—কারণ সংখ্যাগুরু বাঙালি পাঠক মুসলিম অন্তঃপুরিকাদের কথা তেমন জানেন না। জানাটা জরুরি ছিল, বিশেষত মুসলিম বিধবাদের যাপন, রীতভিত, অভ্যাস হিন্দু বিধবাদের থেকে অনেকটাই আলাদা—লিঙ্গবৈষম্যটুকু বাদে। সংখ্যালঘু দাদি-নানিদের প্রতিনিধিত্বকারী লেখার অপ্রতুলতা খেদ জাগায় বৈকি!
এ-সংকলনে ঠাকুমা-দিদিমাদের অধিকাংশই পূর্ববঙ্গীয়। ফলে খাদ্যপ্রকরণের বিষয়টা খুব জোরেসোরেই এসেছে। স্বপ্নময় চক্রবর্তী এ-প্রসঙ্গে বরাবরই স্বচ্ছন্দ, এখানেও সেই প্রসঙ্গের স্বাদ ছুঁইয়ে গেছেন তিনি। কৌশিক গুহ-র শশীমুখী অনেকের ঠাকুমা-দিদিমার মতোই “বড়ি দিয়ে যে অসাধারণ নিরামিষ ঝোল রাঁধতেন, তা এখনও জিভে লেগে আছে। খাদ্য-বিশেষজ্ঞ মুজতবা আলি ও ভোজনশিল্পী বুদ্ধদেব বসু ওপার বাংলার বিধবাদের এই নিরামিষ ঝোলের কথা তাঁদের রন্ধন বিষয়ক লেখায় বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। বুড়ো আঙুলে অল্প ঘষেই বুঝতে পারতেন নারকোলের সঙ্গে তার মিশ্রণের পরিমাণ ও পাকের সময়টুকু। তাঁর নাড়ুর ডৌল ও স্বাদ সমঝদারকে মুগ্ধ করত—চিটচিট বা ঝুরঝুর করত না, আবার শক্ত খটখটেও হত না।” বাঙালি হিন্দু বিধবাদের এই অতি-উদ্যাপিত রন্ধনকুশলতার পিছনে তাঁদের উপর চেপে থাকা বাধ্যতা ও বৈষম্য নিয়ে কমই বলা হয়। কিন্তু অমন স্বাদু রান্নাও তো কখনও গলায় আটকে আসে যখন জানতে পারি, আমিষ থেকে বঞ্চিত অল্পবয়সী বিধবা মেয়েরা আমিষখন্ডের আকারে ধোঁকা নামের খাদ্যটি প্রস্তুত করতেন নিজেদের ধোঁকা দেবেন বলে, অথবা গরম মশলায় জারিয়ে এঁচড় রাঁধতেন ‘গাছপাঁঠা’ নামের প্রবঞ্চনায়! এসব কথা খুব উঠে আসেনি এখানে। কিন্তু আনইন্টারপ্রিটেড তথ্যপুঞ্জ সমাজতত্ত্ব-চর্চার আধখোলা জানালা আরেকটু খুলে দিয়েছে।
শুধু একটি লেখার আলাদা উল্লেখ করে যদি এ আলোচনায় দাঁড়ি টানতে হয়, তবে নিঃসন্দেহে সেটি এই সংকলনের শেষ লেখা প্রসিত দাসের নন্দিতা। এই নন্দিতার নামটুকুই যা আধুনিক, তাঁর জীবনে আর কোনও ‘মহিমা’ নেই। বলবার মতো কৃতিত্ব কিছু নেই তাঁর, না ছিল প্রতিরোধ যা তাঁকে অনুসরণীয় করে তুলতে পারে। তাঁর ছেলে ঘুমের মধ্যে পট করে মরে গেলে সংসার তাকে বিশেষ একটা শোক করবার ফুরসতটুকুও দেয় না। “ফুরসৎ জিনিসটা নন্দিতার এমনিতেই খুব কম। বরাবরই সে যাবতীয় অবস্থাবৈগুণ্য, যাবতীয় অপবাদ, অপমান, গঞ্জনার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে গেছে শুধু গতরে খেটে। তবে সেখানেও নন্দিতার শরীর পাত করাই সার হয়েছে, মন সে কারুরই পায়নি।” প্রসিত অকপট, নন্দিতার গল্পটাকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-মতাদর্শগত জমিতে দাঁড় করানোর ইচ্ছে তাঁর থাকলেও তিনি অপারগ, কারণ দেখা গেল নন্দিতার মনোজগত সম্পর্কে তিনি তেমন কিছুই জানেন না! রূঢ় ঠেকলেও আসল সত্যি কি এটাই নয়? নন্দিতার গল্প তাই “একপেশে বঞ্চনার, জুলুমের, নির্যাতনের গল্প, এক অর্থে আমাদের পারিবারিকতার ভাঁজে ভাঁজে জমে থাকা নিষ্ঠুরতার গল্প” হয়েই ফুরিয়ে যায়। কোনও ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস-ইঙ্গিত ব্যতিরেকেই। লেখক সংশয়ে থাকেন, আদৌ কিছু না হয়ে ওঠার এই গল্প দুনিয়ার অন্য কোনও ঠাকুমা-দিদিমাকে উৎসর্গ করা যায় কিনা!
আমাদের মতে, যায়। কারণ নিজের অজানিতেই নন্দিতা তাঁদের সামনে একটুকরো আয়না হয়ে ওঠেন, কখনও ঘুরে না দাঁড়াতে পারা তাঁর আটপৌরে জীবন দিয়ে নন্দিতা এককভাবেই সমষ্টির দীর্ঘশ্বাসকে ধারণ করেন। পৌত্র-পৌত্রী-দৌহিত্র-দৌহিত্রীদের হাতেও তুলে দেওয়া যায়। যাতে তাঁরা একবার ফিরে ভাবতে বসেন—তাঁদের ঠাকুমা-দিদিমাদের যে সর্বংসহা চেহারাটিকে তাঁরা উদযাপন করে এসেছেন এতকাল, তা কি আদৌ আত্মত্যাগের ছিল? না কি বাধ্যতার?
ঠাকুমা-দিদিমারা । স্বপ্না দত্ত সম্পাদিত । দ্বিতীয় সংস্করণ
প্রচ্ছদ সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বিন্যাস ও বর্ণসংস্থাপন জ্ঞানের আলো
প্রকাশনা বই-টই । মুদ্রণ ডি অ্যান্ড পি গ্রাফিক্স
২৩২ পৃষ্ঠা। হার্ডব্যাক, জ্যাকেট।
মুদ্রিত মূল্য ৩৫০ টাকা
প্রাপ্তিস্থান প্রতিক্ষণ বই-চা-ঘর [৮৬৯৭৮ ৪২৩০৯]
বই-টই [৮৪২০৪ ২৪০৭৯]
অনলাইন www.boichaghar.in
রিভিউ পড়ে বইটা পড়া , কেনা এবং উপহার দেবার বাসনা জেগে উঠলো।