বই চুরি
বোধশব্দ। জানুয়ারী ২০২৪
সম্পাদক সুস্নাত চৌধুরী
ঝেড়ে দেওয়া। ঝেঁপে দেওয়া। মেরে দেওয়া। ঘুরিয়ে দেওয়া। স্থান বিশেষে এই ক্রিয়াগুলি যখন বইয়ের উপরে প্রযুক্ত হয়, তাকেই আমরা ‘বই চুরি’ বলে জানি। ভোগী ও ভুক্তভোগীরা হয়তো ক্রিয়াগুলির সূক্ষ্ম মাত্রাভেদ অনুধাবনেও পারঙ্গম। গুণীজনে বলেন, ‘ঝেড়ে’ বা ‘ঝেঁপে’ দেওয়া যতটা চূড়ান্ত পরিণতিপ্রাপ্ত, ‘মেরে’ দেওয়া সে-অপেক্ষা কয়েক পরত বেশি। আবার ‘ঘুরিয়ে’ দেওয়ার মধ্যে নাকি রয়ে গিয়েছে এক আপাত-অজানিত পরিণতির ছায়া। উলটো প্রান্তে, অধিকতর নিঃসাড়ে কাজ সেরে ফেলার ইঙ্গিত।
এটি হিমশৈলের চূড়া। কিংবা, বই থেকে উঁকি মারা বুকমার্কের টিকিটুকু। সামগ্রিক বই চুরি বিষয়টি বাস্তবিকই সুবিস্তৃত এবং বহুমাত্রিক। বাইবেল-এ চুরি না করার কথা বলা হয়েছে। বাঙালির ‘বর্ণপরিচয়' বলেছে ভুবনের করুণ জীবনবৃত্তান্ত—‘তিনি বুঝিতে পারিলেন, ভুবন ঐ পুস্তক খানি চুরি করিয়া আনিয়াছে। কিন্তু তিনি পুস্তক ফিরিয়া দিতে বলিলেন না, এবং ভুবনের শাসন, বা ভুবনকে চুরি করিতে নিষেধ করিলেন না।' কার্যত যেকোনো চুরির মতোই বই চুরির সঙ্গেও ‘অন্যায়’ বা ‘পাপ’-এর ধারণা জুড়ে না থাকার কোনো কারণ নেই। কিন্তু তবুও বই চুরিকে এককথায় ‘অপরাধ’ বলে দেগে দিতে বোধ হয় আমরা কেউই পারি না। অস্বস্তি বোধ করি। আর এখানেই বিষয়টি হয়ে ওঠে তাৎপর্যপূর্ণ। নানা দিক থেকে আলো ফেলে, নানা দৃষ্টির সমন্বয় ঘটিয়ে তা নিয়ে সুগভীর চর্চার প্রয়োজন পড়ে।
কোন বই চুরি হচ্ছে, কোথা থেকে চুরি হচ্ছে, কে চুরি করছেন এবং কেন চুরি করছেন—এসব আপাতসরল প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বসলে গ্রন্থ সংস্কৃতি ও তার ইতিহাস আরেকভাবে উন্মোচিত হয়। এর সঙ্গে কখনো মিলেমিশে থাকে আমাদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির ছবি, কখনো-বা মানবমনের গহিন রসায়ন। ‘বই চুরি’ বা ‘বই চোর' কথাগুলি শোনামাত্র চুটকি থেকে অ্যানেকডোটের দিকে যাত্রার যে-প্রবণতা আমাদের, ‘বোধশব্দ’–র এই সংখ্যায় তার অতিরিক্ত কিছুটা রাস্তাই হাঁটতে চাওয়া হয়েছে। বই চুরিকে কেন্দ্রে রেখে যেমন উঠে এসেছে প্রকাশনা জগতের কথা, তেমনই এসেছে জ্ঞানের অধিকারের প্রসঙ্গ। তবে হ্যাঁ, শুধুই ভারী কথার পাহাড় নয়, ঝিরিঝিরি নদীর সঙ্গেও নিশ্চয় পথচলতি পাঠকের দেখা হবে।
‘বই চুরি’ সংখ্যার শুরুতে পাঠকের জন্য রইল দু-টি দৃশ্য-উপাদান। একটি কলিকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র-র গত শতকে প্রকাশিত বিজ্ঞাপন, চুরির উল্লেখ সেখানে খানিক প্রতীকী। অপরটি পুরোনো এক বুকপ্লেট, এখানে ভঙ্গিটি মজার। তবে লক্ষণীয়, পাঠের প্রণোদনা মূল উদ্দেশ্য হলেও এই দুইয়ে বই চুরি নিয়ে বিবৃতির অভিমুখ সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী। সাদা-কালো বাইনারি নয়, বরং ধূসর এই ক্ষেত্রটিতে পাঠক প্রবেশ করুন।
—সম্পাদক
প্রকাশনা বোধশব্দ [] বাকি তথ্য পেজের নিচে
Editor
Susnato Chowdhury
Publisher
Bodhshabdo
Other Details
১১৬ পৃষ্ঠা। পেপারব্যাক।
Category
ননফিকশন, আলোচনা: সাহিত্য-সংস্কৃতি, গ্রন্থচর্চা
Tag
Boichuri | Bodhshabdo | January 2024