top of page

কবি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়

Updated: Dec 2, 2020



১৯৭০ দশকের বাংলা কবিতার এক ক্রান্তিসময়েই লিখতে এসেছিলেন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিজমের সমান্তরালে কবিতাকেও যে নিয়ে যাওয়া যায়, এমন বিশ্বাস তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বালি ও তরমুজ’-এ ছিল। স্লোগানধর্মী রাজনৈতিক কবিতার দাপটকে সন্তর্পণে পাশ কাটিয়ে প্রসূন সেই সময়েই লিখতে পেরেছিলেন "তৃতীয় বিশ্বের কোনো প্রচ্ছন্ন বন্দরে বসে, প্রিয়তম/ তোমার আকাশনীল চিঠি পাই আজ।" যে কবিতা শেষ হয়েছিল এমন সব উচ্চারণে— "লবণসৈন্যের হানা, জীবনের ছিটেফোঁটা আদা/ আমি জানি কোথায় লুকিয়ে রাখব, কোন সঞ্চয়কক্ষে, বল/ চিঠিতে এইসব তুমি বলে দাও, আমি/ লবণের থেকে দূর স্থলে ওই আদার গভীরে যেতে চাই।" সংবাদপত্রের ঘোর ছায়া ছিঁড়ে ফেলে অন্য কোনও বাস্তবতারঅনুসন্ধান করেছিলেন সেই সময়েই। পরবর্তী সময়ে ‘উন্মেষ গোধূলি’ বা ‘উত্তর কলকাতার কবিতা’-য় সেই বাস্তব প্রলম্বিত হয়।

এর পরে নিজেকে আবারও বদলিয়েছেন প্রসূন। ‘আনন্দ ভিখিরি’ কাব্যগ্রন্থ থেকে এমন এক যাত্রা শুরু করেন তিনি, যা একই সঙ্গে মিস্টিক ও প্যাশনেট। এই পর্যায়েই লিখিত হয় ‘গুপ্ত দাম্পত্যকথা’-র মতো কবিতাবলি, যেখানে গার্হস্থ্য আর তাকে উত্তীর্ণ করে আধ্যাত্ম্য একাকার হয়ে রয়েছে। প্রসূনকে ‘উত্তর কলকাতা’-র স্থানিক চিহ্নে দেখতে ভালোবাসেন অনেক আলোচকই। সেই দর্শন খুব একটা ভুলও নয়। কিন্তু এই স্থানিকতার গভীরে তিনি কী রেখে যাচ্ছেন, সেটাও তাঁর কবিতার পাঠককে মনে রাখতে হবে।

এমন এক ভাষায় প্রসূন কবিতা লিখেছেন, যা আপাত ভাবে দৈনন্দিনের। কখনও তা উঠে আসে বাগবাজারি রোয়াকের আড্ডা থেকেও। এই ভাষা আসলে একটা অন্তর্ঘাত। একে ছুড়েই দুমড়ে দেওয়া যায় যাবতীয় ‘শিল্পিত বাবুয়ানি’। সেই অন্তরর্ঘাতকে প্রসূন সচেতন ভাবে ব্যবহার করেছেন তাঁর শেষতম কাব্যপুস্তিকা ‘টুরিস্ট কাহিনী’-তেও। এই সাবভার্সনের যাত্রাপথে পাঠক নিজের অজান্তেই তাঁর সঙ্গী হয়ে যান। আর এক অপ্রতিরোধ্য নেশার মতো তাকে লালন করেন। অন্তর্ঘাতের গোপন রসায়ন জারিত হতে থাকে পাঠকের মস্তিষ্কে।

- অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়

Comments


Commenting has been turned off.
bottom of page