য়ান মিরডাল প্রয়াত হয়েছেন ঠিক এক সপ্তাহ আগে, ৩০ অক্টবর। বাঙালি পাঠকসমাজে ততটা পরিচিত নাম না হলেও আন্তর্জাতিকভাবে য়ান ছিলেন অতিসম্মানিত ও অতিবিতর্কিত একটি নাম। তাঁর প্রতিষ্ঠানবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী মতামতের স্পষ্ট প্রকাশের জন্য। ২০১২-র বইমেলায় তাঁর বাংলায় অনূদিত বইটি (ভারতের আকাশে লাল তারা, সেতু প্রকাশনী) প্রকাশিত হওয়ার পর এখানে তাঁকে নিয়ে সচেতন পাঠকের ঔৎসুক্য জন্মেছে।
য়ান মিরডাল সুইডেনের দুই প্রবাদপ্রতিম সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট বুদ্ধিজীবী নোবেল লরিয়েট আলভা ও গুনার মিরডালের সন্তান। জন্ম ওঁর ১৯২৭-এ। নিজেও সুপন্ডিত ছিলেন, প্রত্যাশিত ছিল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাসির নিরাপদ প্রগতিশীল আবহে তিনিও প্রতিষ্ঠানস্বীকৃত লেখক বুদ্ধিজীবীই হয়ে উঠবেন। কিন্তু ১৯৫০-এই য়ান হয়ে উঠলেন মাও ৎসে তুঙ চিন্তাধারার প্রবল অনুগামী, এবং স্তালিনোত্তর সোভিয়েত ইউনিয়নের কঠোর সমালোচক, যা শেষ পর্যন্ত তাঁকে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদে বাধ্য করেছিল। ছয়ের দশক থেকেই সুইডিশ বামপন্থী মহলে য়ান একজন গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন। ১৯৬৩তে বেরোন মিরডালের রিপোর্ট ফ্রম আ চাইনিজ ভিলেজ প্রায় এডগার স্নো-র 'রেডস্টার ওভার চায়না' বইটির সমতুল বলে কোনো কোনো মহলে বিবেচিত হয়। এই বইটি অবশ্যই তাঁকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করেছিল, সন্দেহ নেই, কিন্তু এটিকেই তাঁর একমাত্র উল্লেখযোগ্য বই ভাবলে ভুল হবে। কী নিয়ে লেখেননি মির্ডাল!! যুদ্ধের সময়কার প্রোপাগান্ডা পোস্টার, ফরাসি ক্যারিকেচার, আফগানিস্তান, ভারতীয় নকশাল রাজনীতি, বালজ্যাক, সুরা, যৌনতা, মৃত্যু।.. কী নয়? অন্যধারার উপন্যাস আই-নভেল লিখেছেন বেশ কিছু, আত্মজীবনীর মৌল যেখানে আচ্ছন্ন করে রাখে উপন্যাসের উপাদানকে।
আমৃত্যু সর্ব ছিলেন 'ফ্রিডম অফ স্পিচ' নিয়ে। Folket i Bild/Kulturfront (FiB/K) নামের যে পত্রিকাটি তিনি প্রকাশ করতেন, তা বলতে গেলে এই স্বাধীনতার জন্যই উৎসর্গীত ছিল। প্রচুর লিখেছেন তিনি এই পত্রিকার জন্য। শেষ পর্যন্ত ভগ্নস্বাস্থ্য তাঁকে কলম থামাতে বাধ্য করল এই ২০২০-তেই। বোধ করি তারপরেই আর বেশি দিন বাঁচার তাগিদ খুঁজে পাননি য়ান মিরডাল!
Comments