অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা ১৮
অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা ২২
অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা ২৩
অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা ২৯
অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা ৩৯
স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশাল
'বিপ্লববাদী'দের লেখা গুপ্ত সমিতির ইতিহাস
শুনেছে কে কোনোদিন আঘাত ছাড়াই
শান্তিতে সরে গেছে অত্যাচারী?
সংগ্রাম চিরদিনই রক্তরাঙা
ওই সূর্য রক্তরাঙা সাক্ষী তারই।
সরকারী মান্যতাপ্রাপ্ত ইতিহাস বইগুলি যখন কংগ্রেসি ও গান্ধিবাদী ধারাটিকে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের মূলধারা হিসাবে অধ্যায়ের পর অধ্যায়ে মান্যতা দেয় এবং সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাসকে ছোট ছোট অনুচ্ছেদে আটকে ফেলে, বিকল্প ইতিহাস চর্চা তখন অত্যন্ত জরুরি ভূমিকা পালন করে। এখানে উল্লিখিত ছ'টি বই এককভাবে না হলেও ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলায় 'বিপ্লববাদের' বিকাশ, গৌরব ও সীমাবদ্ধতাকে পূর্বাপর লিপিবদ্ধ করেছে। অগ্নিযুগের বিপ্লববাদী সশস্ত্র সংগ্রামীদের মধ্যে অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল - ধর্মভাবনার প্রশ্নে, সমাজভাবনার প্রশ্নে, রাজনীতিভাবনার প্রশ্নে। সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা ছিল ঔপনিবেশিকতাবিরোধী সংগ্রামকে ব্যাপক ভারতীয় জনগণের সংগ্রাম না ভেবে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবীরত্বের বিষয় হিসাবে দেখায়। এই জায়গা থেকেই গুপ্ত সমিতিগুলির জন্ম ও বড় হওয়া। ভারতেতিহাসের অসাধারণ গৌরবময় এই অধ্যায়টিকে পাঠের সময় আমাদের মনে রাখা উচিত, যাবতীয় সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এই বিপ্লববাদী প্রচেষ্টার অন্তত দুটি ঐতিহাসিকভাবে আলাদা গুরুত্ব দাবি করে।
১) এই বিপ্লববাদী যুবসমাজ স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে বিনা আঘাতে কোনো বিদেশি শক্তি উপনিবেশকে ছেড়ে যায় না, ব্রিটিশরাও যাবে না। সুতরাং গান্ধি-কংগ্রেসের নিয়মতান্ত্রিক পথ একটি অচল পথ, আদতে স্থিতাবস্থা টিঁকিয়ে রাখার পথ।
২) মূলগতভাবে হিন্দুধর্মীয় ও ভাববাদী চিন্তার আধিপত্য থাকলেও এই গুপ্ত সমিতিগুলির মধ্যে অজ্ঞেয়বাদ, যুক্তিবাদ, বৈজ্ঞানিক সমাজবাদের অভিমুখে, অস্পষ্ট কিন্তু অনিসন্ধিৎসু মন নিয়ে একটা যাত্রা ছিল, যার শ্রেষ্ঠ ফসল সম্ভবত ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের সাথে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের মিথষ্ক্রিয়া। এমনকি হেমচন্দ্র-অবিনাশ-উল্লাসকরেরাও যে অরবিন্দ-বারীন্দ্রের ভক্তিবাদ/ভাববাদকে পরিহার করতে পেরেছিলেন, তা' এই 'কোয়েস্ট'-এরই ফসল ছিল।
জীবনতারা হালদারের 'অনুশীলন সমিতির ইতিহাস' যেখানে প্রচুর মূল্যবান তথ্য সমাহারে একটি গুপ্ত সমিতির ইতিবৃত্তেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছে; হেমচন্দ্র কানুনগো এবং অবিনাশ ভট্টাচার্যের বইদুটির ফোকাস অনুশীলন>যুগান্তর পর্বে; ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ও সত্যেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বইদুটিতে আলোচিত হয়েছে একাধিক দলের/গ্রুপের প্রেক্ষাপট, খুঁটিনাটি ও মূল সংগঠকদের ভূমিকা, আত্মোন্নতি সমিতির কথা দুটিতেই এসেছে বিশদে। হীরালাল দাশগুপ্তর 'স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশাল' স্থানিক ইতিহাসচর্চা, এটিতে সিংহভাগ জুড়ে যদিও সত্যাগ্রহ-অসহযোগ-অশ্বিনী দত্ত, কিন্তু যুগান্তর দল গঠনে বরিশাল জেলার বিপ্লবীদের ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়ের কারণে এটিকে আজকের প্রিভিউএ যোগ করা হয়েছে [আরেকটি দল 'বি ভি' বা বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স বিষয়ে একটি বিস্তারিত আলোচনা এখনও কিন্তু উপেক্ষিত রয়ে গেল, আমাদের আশা 'অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা'র প্রকাশক অচিরেই আমাদের সেই খেদ মিটিয়ে দেবেন]।
হেমচন্দ্র কানুনগো আর অবিনাশ ভট্টাচার্যের বইদুটি যুগান্তর দলের মধ্যেকার প্রায় অনালোচিত অন্তর্স্রোতটিকে বুঝতে সাহায্য করে। আমাদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করেছে অবিনাশ ভট্টাচার্যের 'বৈপ্লবিক সমিতির প্রারম্ভকালের ইতিহাস ও অন্যান্য'তে সম্পাদক অশোক চট্টোপাধ্যায়ের 'উপেক্ষিত বিপ্লবী অবিনাশ ভট্টাচার্য' অংশটি। অরবিন্দ-বারীন্দ্রের পলায়নবাদের সঙ্গে অবিনাশ ভট্টাচার্যের দেশব্রতে দৃঢ় থাকার প্রতিতুলনা করে সম্পাদক বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন - আত্মত্যাগ আর আত্মরক্ষার মতাদর্শিক সংঘাত সশস্ত্র সংগ্রামের ময়দানে আজকের মতো সেদিনও ছিল, ইতিহাসের নিয়মেই ছিল।
[ ছ'টির মধ্যে একমাত্র 'স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশাল' সাহিত্য সংসদ প্রকাশনা, বাকি পাঁচটিই ব়্যাডিকাল ইম্প্রেশনের 'অগ্নিযুগ গ্রন্থমালা'র অন্তর্গত ]
تعليقات